ফটিকছড়ির প্রাচীন স্থাপত্য

ফটিকছড়ির প্রাচীন স্থাপত্যঃ

প্রাচীন বস্ত, প্রাচীন স্থাপত্য এসবের সকলেরই কমবেশী আগ্রহ আছে। প্রাচীন স্থাপত্য যদি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ও ইতিহাস সমৃদ্ধ হয় তবে সবারই কৌতুহলের শেষ নেই। প্রাচীন স্থাপত্য সম্পর্কে কিছু লিখতে যাওয়া যে একটি দুঃসাধ্য ও সাহসী ব্যাপার তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তুবুও চেষ্টা করেছি নিজ এলাকার গৌরবময় স্থাপত্য সমূহ সম্পর্কে কিছু লিখার। ইতিহাস মানেই ব্যাপক কিছু। অনেক অজনা তথ্য যার শেষ নেই।  প্রাচীন স্থাপত্য একটি গবেষণার বিষয়। এ সম্পর্কে কিছু লিখতে হলে প্রচুর গবেষণার প্রয়োজন চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি একটি ঐতিহ্যবাহী থানা। ফটিকছড়ির প্রত্যন্ত অঞ্চল জুড়ে রয়েছে শত শত বৎসর আগের ঐতিহ্যের চিহ্ন। ফটিকছড়ির ইতিহাস নিয়ে খুব একটি লেখালেখি না হওয়ায় প্রায় ঐতিহ্যই মানুষের অজ্ঞাত হতে চলেছে। যে কয়েকটি প্রাচীন স্থাপত্য বিশেষ বৈশিষ্ট্যর দাবী রাখে তার মধ্যে আহসান উল্লাহ গোমস্তার মসজিদ, মুরালী মসজিদ, জুনীর বাপের মসজিদ, আদালত খাঁর বাড়ী, মাইজভান্ডার শরীফ, বড়ুয়া পাড়া কেয়াং, আবদুল্লাহপুর মন্দির, আয়নাদিয়া মসজিদ, উকিল বাড়ী, মুফতী মসজিদ, লাইল্লা হরাইল্লার মসজিদ, বিবিধ দীঘি, আবিদ শাহের মাজার, কোটের পাড়, কুন্ডুর কাচারী, বাবু নগর মাদ্রাসা, ওবাইদিয়া মাদ্রাসা অন্যতম

আহসান উল্লাহ খাঁ গোমস্তার মসজিদ : 
এটি বক্তপুর গ্রামে অবস্থিত। ধারণা করা হয় প্রায় ৪০০ বৎসর পূর্বে মসজিদটি নির্মিত হয়। রড ও সিমেন্ট ছাড়া আধাপাকা ইটের দ্বারা নির্মিত মসজিদটির এক একটি দেওয়ালের গভীরতা ৬ ফুট। কথিত আচে সিমেন্টের চাহিদা পূরণের জন্য দেওয়াল এবং ছাদে ব্যবহার করা হয়েছে হাঁস ও মুরগীর ডিম

মুরালী মসজিদ : 
আজাদী বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে এটি অবস্থিত। ধারণা করা হয় ১৫০ বৎসর আগে এই মসজিদ তৈরী করা হয়। সুন্দর গোটা এই মসজিদ তৈরী করেন। এটি ভিতরে কারুকার্যে খচিত। যেটি বর্তমান আধুনিকতার প্রশংসার দাবীদার

জুনির বাপের মসজিদ : 
এটি ফতেপুর গ্রামে এজীর হাটের পশ্চিমে অবস্থিত। এর ভিতরের কাজ আকর্ষণীয়। এটি প্রায় ১৫০ বৎসর আগের মসজিদ। এটি সম্পর্কে মুখরোচক গল্প শোনা যায়। এক সময় রাত ১২টার পর পীর দরবেশরা এখানে এবাদত করত। এই মসজিদ এর নামে বা জুনির বাপের নামে কোন নিয়ত করলে ফল পাওয়া যায়। বর্তমানে মসজিদ কমিটি এর যথেষ্ট সমপ্রসারণ করেছে। বর্তমানে একটি মাদ্রাসাও করা হয়েছে

মাইজভান্ডার শরীফ : 
প্রায় ১৫০ বৎসর আগের এই দরগাহ্‌ শরীফ। জনাব আহমদুল্লাহ শাহ এর রওজা এখানে রয়েছে। তিনি বড় বুজুর্গান ছিলেন। মওলানা গোলামুর রহমান এর রওজাও মাইজভান্ডার শরীফের প্রাচীন র্কীতি। বর্তমানে এখানে ওনারওয়ারিসদের নামে বেশ কিছু রওজা নামে বেশ কিছু রওজা হয়েছে

লাইল্লা হরাইল্লার মসজিদ : 
আবদুল্লাহপুরে এটি অবস্থিত। প্রায় শতাধিক বৎসরের পুরোণো মসজিদ। কথিত আছে সোনার মাইট পেয়ে জনৈক ব্যক্তি মুফতি মসজিদের অনুকরণে এটি তৈরী করেন

বিবির দীঘি : 
এখানকারজমিদার বিবি এই দিঘী তৈরী করেন। এই দীঘির ঘাটগুলো খুবই আকর্ষণীয় ছিল। বর্তমানে এই ঘাটগুলো ধ্বংস প্রায়। কথিত আছে, খাজনা দিতে না পারলে প্রজাদের তিনি ছাগলের ঘরে বেঁধে রাখতেন

কোটের পাড় : 
প্রায় ১৫০ বৎসর পূর্বের এই বাড়ী, এখানকার তৎকালীন জমিদার এটি তৈরী করেন
এখানে একটি কেল্লা ছিল। এখানে জমিদারের অফিস বসত। বর্তমানে এটি প্রায় ধ্বংস
আবিদ শাহের মাজার : 
 এটিও শতাধিক বৎসরের  পুরোণো মাজার

কুন্ডুর কাচারী : এটি জাহানপুরে অবস্থিত। কুন্ডুর বিশাল সম্পত্তি ছিল। তাঁর কাচারীতে খাজনা আদায় হত। এটিও ধ্বংস

বড়ুয়া পাড়া কেয়াং :  
এটি জাহানপুরে অবস্থিত। প্রায় ১৫০ বৎসর পুরোণো এই কেয়াং। বড়ুয়াদের জন্য এটি একটি অন্যতম পবিত্রতম স্থান। দুরদুরান্ত থেকে এখনও পূর্ণিমার সময় বড়ুয়ারা এই কেয়াং এ আসে

আবদুল্লাহপুর মন্দির : 
এটিও শতাধিক বৎসরের পুরোণো হিন্দুদের একটি পবিত্রতম স্থান। পুঁজার সময় এই মন্দিরে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়

আয়না দিয়া মসজিদ : 
 আজাদী বাজারের কাছেই এটি অবস্থিত। কথিত আছে প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী কালা মিয়া সাহেব এই মসজিদ তৈরী করেন। বর্তমানে এই মসজিদ যথেষ্ট সমপ্রসারিত হয়েছে

উকিল বাড়ী : 
এটি কাঞ্চনপুরে অবস্থিত। প্রায় শতাধিক বৎসরের পুুরোণো বাড়ী। বাড়ীর মালিক জমিদার সোনা মিয়া অত্যন্ত প্রভাবশালী লোক ছিলেন। বর্তমানে এটি ম্রিয়মান

মুফতি মসজিদ :
প্রায় ১২০ বৎসর আগের এই মসজিদ। মুফতি ফয়জুল্লাহ এই মসজিদ তৈরী করেন। জহানপুর স্কুলের পূর্বে দক্ষিণ পার্শ্বে এটি অবস্থিত

আবদুল বারি চৌধুরীর বাড়ী : 
প্রায় শতাধিক বৎসরের আগের জমিদার বাড়ী। উনার নামে এখানে একটি অতি পুরাতন মসজিদ আছে। এই মসজিদটি নাজিরহাটের দৌলতপুরে অবস্থিত

পেলাগাজী মসজিদ ও দীঘি : 
এটিও প্রায় দেড় শতাধিক বৎসর আগের মসজিদ। কথিত আছে, এই মসজিদের দীঘিতে পুণ্যবান লোকেরা স্বর্ণের নৌকা পেত। এটি পাইন্দং এ অবস্থিত

কাজী বাড়ী মসজিদ : 
এটিও শতাধিক বৎসরের পুরোণো মসজিদ। কাজী সাহেব বেশ প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন। এখানে তিনি জেলখানাও তৈরী করেছিলেন। এটি ভূজপুরে অবস্থিত

হাইদচকিয়া বৌদ্ধ বিহার : 
এটি প্রায় দেড় শতাধিক বৎসর আগের বৌদ্ধ বিহার। এখানে একটি প্রায় ৩৫ ফুট দীর্ঘ বুদ্ধ মূর্তি আছে। দুরদুরান্ত থেকে বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের লোকেরা এখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন

গুরুদাশ ঠাকুরের মন্দির : 
এটি দৌলতপুরের নিকট অবস্থিত। প্রতি বৎসর এখানে আকর্ষণীয় মেলা হয়। দূর দূরান্ত থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রতি বৎসর পুজার জন্য এখানে আসেন। বাবু নগর ওবাঢ়ইদিয়া মাদ্রাসাও বেশ প্রাচীন

বর্তমানে এগুলো যথেষ্ট সমপ্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে পুরোণো এছাড়া আরও অনেক প্রাচীন স্থাপত্য আছে যেগুলো প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি।